নীতিমালার আওতায় আনতে হবে অ্যাম্বুল্যান্স

জীবন রক্ষার বাহন জীবন কেড়ে নেওয়ার বাহনে পরিণত হওয়া ঠিক কথা নয়। অথচ বর্তমানে জীবন রক্ষার বাহন অ্যাম্বুল্যান্স প্রাণ কেড়ে নেওয়ার বাহনে পরিণত হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স এখন জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই বড় বড় দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে এই বাহন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, অ্যাম্বুল্যান্স রোগীর সেবা দিলেও এটি কিন্তু একটি পরিবহন। অর্থের বিনিময়ে অ্যাম্বুল্যান্স রোগীর সেবা দেয়। এটিকে সেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

অথচ অ্যাম্বুল্যান্স কী, দেশে এর সংজ্ঞাই নির্ধারণ করা হয়নি।

সড়ক পরিবহন আইন, সড়ক পরিবহন বিধিমালা, ট্রাফিক আইন, কোথাও অ্যাম্বুল্যান্স প্রসঙ্গে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। কারা এই পরিবহনের মালিক হবেন, কিভাবে এটি পরিচালিত হবে, ভাড়া কোন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে, ভাড়া কত হবে, অ্যাম্বুল্যান্সের প্রকারভেদ ও মান কে, কিভাবে নির্ধারণ করবেএসব প্রশ্নের উত্তর না থাকায় যে যেমন খুশি তেমনভাবে অ্যাম্বুল্যান্স পরিচালনা করছে।

সড়কে অ্যাম্বুল্যান্সের দুর্ঘটনা কমাতে হলে এটিকে একটি নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে কখনো দেখিনি অ্যাম্বুল্যান্সচালকের লাইসেন্স চেক করতে।

অ্যাম্বুল্যান্সের দোহাই দিয়ে খালি অ্যাম্বুল্যান্সও উল্টো পথে চলতে দেখছি। অকারণে ট্রাফিক আইন ভাঙা হচ্ছে। এসব ঠিক না। এটি একটি পরিবহন। এটি আইনের ঊর্ধ্বে চলতে পারে না।
বহু আগেই অ্যাম্বুল্যান্সের বাণিজ্যিক নীতিমালা করা উচিত ছিল। অনেক অ্যাম্বুল্যান্সচালকের লাইসেন্সও নেই। এরা অপেশাদার। এই যান চালানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার। এই প্রশিক্ষণ এদের নেই। এসব দেখারও কেউ নেই।

অ্যাম্বুল্যান্স হয় কোনো হাসপাতালের অধীনে চলাচল করবে, নয়তো কোনো কম্পানির অধীনে। একক ব্যক্তি মালিকানায় এটি চলতে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। অ্যাম্বুল্যান্স বন্ধ করা গেলে এই পরিবহনে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ তৈরি হবে। চালকরা নিয়োগপত্র পাবেন। চালকের চাকরির নিশ্চয়তা থাকলে এই পরিবহন খাতও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুল্যান্স বানানো হচ্ছে। সিএনজিতে এসব গাড়ি চলছে। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকার কথা, সেখানে এসব গাড়িতে থাকছে সিএনজি সিলিন্ডার। এতে দুর্ঘটনা ঘটে আগুনে পুড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে।

অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য নীতিমালা না থাকায় আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে ভাড়া। অ্যাম্বুল্যান্স খুব জরুরি প্রয়োজনের পরিবহন। বিপদের সময় ভাড়া নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে না। নীতিমালা থাকলে মানভেদে কিলোমিটারপ্রতি অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া নির্ধারণ করা থাকত। অ্যাম্বুল্যান্স মালিকরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারতেন না। মনে হচ্ছে, রাইড শেয়ারিং অ্যাপে অ্যাম্বুল্যান্স যুক্ত করার সময় এসে গেছে। এটা করা হলে মানুষ উপকৃত হবে। 

লেখক : পরিবহন বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক বুয়েট