মেট্রোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

মেট্রোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে



মেট্রো রেল যে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থার চিত্র বদলে দিয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। রাজধানীর চিরচেনা তীব্র যানজটের মধ্যে একটা সুনিশ্চিত ও আরামদায়ক করিডর এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে।

কিছু জায়গায় হলেও যানজট কমে এসেছে।

অথচ আমরা এখনো মেট্রোর সর্বোচ্চ ব্যাবহারিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারিনি।


মেট্রো বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিকল্পনার নকশা অনুযায়ী, ট্রেনে দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আমরা এই ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছি না।


কোচগুলোর দরজার সামনে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে ভেতরের দিকে জায়গা থাকে। সে জায়গাগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এখানে যাত্রীদের সচেতনতা দরকার।


অন্যান্য অনেক দেশে মেট্রোতে ‘পুশ ম্যান’ থাকে, যারা যাত্রীদের ঠেলে ভেতরে পাঠায়। আবার জার্মানি মেট্রোর সুবিধা নিতে পারছে। যেখানে আমাদের পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা রয়েছে, সেখানে এখন আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরো সক্ষমতাটাই নিংড়ে নিতে হবে।

মেট্রোতে কোচ বাড়ানোর কথা হচ্ছে।


চলাচলের সময় আরো কমিয়ে আনা যায় কি না, সেই ভাবনাও চলছে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিও আলোচনায় আছে। এসব কিন্তু করা সম্ভব।

কিন্তু একটি কোচের সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার না করে নতুন কোচ যুক্ত করলে কি অনেক বেশি লাভ পাওয়া যাবে? আবার ট্রেন বাড়ালে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে, সেটিও কিন্তু মনে রাখতে হবে।    


এখানে ভেবে দেখার আরেকটি বিষয় রয়েছে। সড়কের ওপর দিয়ে মেট্রোর যাতায়াত সহজ হয়েছে। কিন্তু নিচের সড়কের সুফল এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা মেট্রো রেলের জন্য একদা ভারী বিনিয়োগ করেছি। এই বিনিয়োগের সুফল শুধু যারা মেট্রো ব্যবহার করবে, তারাই কেন পাবে!


ঢাকার মেট্রোর পথে মূল সড়কে চলাচলকারীদেরও সুফল পাওয়া উচিত। এটা নিশ্চিত করতে হলে মেট্রোর পাশাপাশি নিচের সড়কের উপযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। এখনই সময় সড়কের পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর। সেটা না হলে পরবর্তী সময়ে নিচের সড়কের উপযোগিতা তৈরি করা আরো কঠিন হবে। কারণ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধীরে ধীরে পুরো ঢাকা শহর মাকড়সার জালের মতো পুরো মেট্রোর নেটওয়ার্কে চলে আসবে।


২০৩০ সালের মধ্যে সব মেট্রো হয়ে গেলেই কি ঢাকার অবস্থা স্বাভাবিক হবে? যদি আমরা নিচের সড়ক ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে না পারি, তাহলে পরিবর্তন সহজ হবে না। সড়ক ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে না পারলে মেট্রো খুঁটির ওপর আরাম দেবে ঠিকই, সড়কের যন্ত্রণা কমাবে না। তাই মেট্রোর পাশাপাশি সড়ক নিয়েও দ্রুত কাজ করতে হবে। মেট্রোর অনেক যাত্রীর সঙ্গে গবেষণার খাতিরে আমাদের দল কথা বলেছে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা অনেক পর্যবেক্ষণ পেয়েছি। যেমন যাত্রীরা সেবার মান নিয়ে খুশি আছে, কিন্তু স্টেশনের নিচের ফুটপাতের হাঁটার উপযোগিতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হকার বসে যাচ্ছে। স্টেশনের প্ল্যাটফরমের পাশাপাশি স্টেশনের বাইরের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।


রাজধানীতে মেট্রোর পুরো নেটওয়ার্ক তৈরি হওয়ার পাশাপাশি সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাকে এক সুতায় নিয়ে আসতে হবে। এটি করা গেলে মেট্রো রেল ওপর-নিচের দুই পথের জন্যই বড় সমাধান নিয়ে আসবে। এতে ভারী বিনিয়োগের সুফল পাবে গোটা ঢাকাবাসী।     


 Source: কালের কন্ঠ


লেখক : পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক, বুয়েট